সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৫:৪৫ অপরাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক : ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের মহাপরিচালক বলেন, অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে সুলতান’স ডাইনের কাছ থেকে লিখিত দেওয়া হয়। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগের প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তাই সুলতান’স ডাইনকে অন্য প্রাণীর মাংস ব্যবহারের অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের মহাপরিচালক জানান, সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে এক ব্যক্তি অভিযোগ করেন সুলতান’স ডাইনের কাচ্চিতে খাসির পরিবর্তে অন্য প্রাণির মাংস ব্যবহার করা হচ্ছে। সেই ফেসবুক পোস্টটি অনেক বেশি ভাইরাল হয়। এর প্রেক্ষিতে ওই প্রতিষ্ঠানে অভিযান চালানো হয়। অভিযানের পর আজ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের শুনানির জন্য ডাকা হয়েছিল। আজ সকালে সুলতান’স ডাইনের ম্যানেজারসহ অন্য কর্মকর্তারা এসেছিলেন। পরে তাদের কাছ থেকে একটি লিখিত বক্তব্য নেওয়া হয়েছে। ওই বক্তব্যে খাসি বাদে অন্য প্রাণির মাংসের ব্যবহার নিঃসন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত না হওয়ায় অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানকে অন্য প্রাণীর মাংস ব্যবহারের অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
এইচ এম সফিকুজ্জামান আরও জানান, যে ব্যক্তি ফেসবুকে অভিযোগ করেছিলেন; তার বক্তব্য এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। তার ব্যক্তিগত মোবাইল নম্বরটিও বন্ধ পাওয়া গেছে।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের প্রধান জানান, ‘সুলতান’স ডাইন রাজধানীর কাপ্তান বাজারের মা-বাবার দোয়া গোস্ত বিতান থেকে খাসির গোস্ত সংগ্রহ করে থাকে। কাপ্তান বাজারে খাসি জবাই করার সময় অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি মাঝে মধ্যে উপস্থিত থাকেন। আবার অনেক সময় উপস্থিত থাকা সম্ভব হয়নি। তবে এসব মাংস ভেন্ডার নিজ দায়িত্বে মাংস সুলতান’স ডাইনে পৌঁছায়।
এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, সন্দেহযুক্ত চিকন হাড়ের ব্যাপারে অভিযুক্ত জানান, ৭ থেকে ৯ কেজি ওজনের খাসির মাংস তারা ব্যাবহার করেন। এটা আকারে ছোট হওয়ায় এসব খাসির হাড় চিকন হয়।
বিরিয়ানিতে খাসির মাংসের বদলে অন্য প্রাণির মাংস দেওয়ার অভিযোগ ওঠার পর গত সপ্তাহে অভিজাত রেস্তোরাঁ সুলতান’স ডাইনে অভিযান চালায় জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর। পাশাপাশি নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষও প্রতিষ্ঠানটির গুলশান শাখায় অভিযান চালায়।
ওই অভিযানে সেখানকার কর্মীদের কথাবার্তায় সন্দেহ হয় ভোক্তার কর্মকর্তাদের। তাই আজ সোমবার (১৩ মার্চ) পুরো বিষয়ের ব্যাখ্যা দেওয়ার জন্য মাংস সরবরাহকারীসহ সুলতান’স ডাইন কর্তৃপক্ষকে উপস্থিত থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়। সকালে সুলতান’স ডাইন কর্তৃপক্ষ তাদের বক্তব্য দেন। পরে সংবাদ সম্মেলন করেন জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান।
গত ২ মার্চ রাজধানীর গুলশানে একটি প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা সাত প্যাকেট সুলতান ডাইনের কাচ্চি বিরিয়ানি কিনে নিয়ে যান। গুলশান শাখা থেকে আনা সেই বিরিয়ানি খাওয়ার একপর্যায়ে খাসির মাংস নিয়ে সন্দেহ সৃষ্টি হলে তারা ওই শাখার নম্বরে কল করেন। পরবর্তীতে দুজন লোক নতুন খাবারের প্যাকেট নিয়ে আসেন। ওই সময় সেখানে প্রতিষ্ঠানটির কর্মীদের সঙ্গে কথা কাটাকাটি হয়। পরে এর একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। তারপর থেকেই বিষয়টি নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়।
পরে বিষয়টি সরেজমিন দেখতে গত বৃহস্পতিবার (৯ মার্চ) জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের উপপরিচালক মো. মঞ্জুর শাহরিয়ারের নেতৃত্বে একটি দল সুলতান ডাইনের গুলশান শাখায় অভিযানে যায়। সেখানে নানা বিষয় কথাবার্তার পর সুলতান’স ডাইন কর্তৃপক্ষকে মঞ্জুর শাহরিয়ার বলেন, আপনাদের কথার কোনো মিল নেই। কখন কী বলছেন তার মিল নেই। আপনাদের কথা যে কেউ শুনলে সন্দেহ পোষণ করবে। সেদিনের ভিডিওতেও সন্দেহজনক আচরণ ছিল। আজকে যা যা বলেছেন সব রেকর্ড করা হয়। এ ঘটনায় আজ ১৩ মার্চ শুনানি হয়।
একই দিন নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের একটি টিম অভিযান চালায় সুলতান’স ডাইনের গুলশান শাখায়। তারা মূলত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা এবং নিরাপদ খাদ্যের প্রতিবিধান মেনে চলছে কি-না তা দেখতেই এই অভিযান চালায়। সেই অভিযানে নানা অব্যবস্থাপনা পেয়ে সেগুলো ঠিক করতে তাদের ১০ দিন সময় দেওয়া হয়। এরই ধারাবাহিকতায় আগামী ২০ মার্চ আবারও তদারকি করতে যাবেন নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের টিম। এরমধ্যে সংশোধন না হলে সেদিন আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানা গেছে।